সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৬ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

জবানের হেফাজত

ধর্ম ডেস্ক:
কথায় মানুষ হাসে, কথায় কাঁদে। কথায় কেউ কাছে আসে, কেউ দূরে যায়। এতে আছে জাদুর শক্তি, মধুর মিষ্টতা। আছে বিষ, মাকালের তিক্ততা। তিন ইঞ্চি জিহ্বায় বৈচিত্র্যের সমাহার। আশ্চর্য এক মাংসপি- এটি। সঠিক ব্যবহারে ব্যক্তি হয় প্রশংসিত অপব্যবহারে হয় নিন্দিত। মিষ্টভাষী লোককে কে ভালো না বাসে? কার কাছে তিনি সম্মান পান না? পক্ষান্তরে কটুভাষীকে কে ভালো পায়? কার কাছে তার মূল্য আছে? কথায় প্রাণ জুড়ায় কথায় দিল পোড়ায়। প্রতিদিন কত হৃদয়, কত সংসার ভেঙে খানখান হচ্ছে কথা বা জিহ্বা নামক ছোট্ট মাংসপিন্ডের কারণে। অথচ সৃষ্টিকর্তা তাকে আড়াল করেছেন আটাশ বা বত্রিশ সংখ্যার দুপাটি দাঁত দিয়ে। ফের দুঠোঁটের বেষ্টনীতে তাকে করেছেন আরও সুরক্ষিত। কিন্তু তার পরও কি তাকে আটকে রাখা যায়? কখনো সে সুবাস ছড়ায় কখনো দুর্গন্ধ। পৃথিবীতে যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত তার সিংহভাগই ঘটে জিহ্বার কারণে।

তাই ইসলাম কথাবার্তায় শালীন ও সংযত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সুরা আহজাবে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় করো, সঠিক কথা বলো তাহলে তিনি তোমাদের আমল সংশোধন করে ক্ষমা করে দেবেন। সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবিহ ও বেশি বেশি জিকির করো।’ আর প্রতিটি কথা ভেবেচিন্তে বলার তাকিদ দিয়ে সুরা কাফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তাই গ্রহণের জন্য সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।’ সুতরাং অতি সতর্ক হয়ে মুমিনকে কথা বলতে হবে। বাজে কথা বললে মুমিন তার গুণের ওপর থাকে না। সুরা মুমিনুনে সেই শিক্ষা তাকে দেওয়া হয়েছে। সহিহ বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন উত্তম কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। সুতরাং চুপ থাকা ইবাদত ও সুন্নত। ‘মান সামাতা নাজা’ বা যে চুপ রইল সে মুক্তি পেল-নবীজি এ বিখ্যাত হাদিস অনেককেই বলতে শোনা যায়।

হজরত লোকমান হাকিম (আ.) তার ছেলেকে বলেছিলেন, ‘হে বৎস! কথা যদি হয় রৌপ্যতুল্য নীরবতা স্বর্ণতুল্য।’ প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় হলো ‘যার জবান ও হাত থেকে অন্যরা নিরাপদে থাকে।’সহিহ বোখারি ও মুসলিম

আমাদের নবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা মৃদুভাষী, মিষ্টভাষী। তার কথায় মুগ্ধ হয়ে মুশরিকরা মুসলমান হয়েছেন। যারা তার সমালোচনা করত কখনো কাছে এসে কথা শুনলে হৃদয়ে দাগ কাটত। বাড়িঘর ফেলে পিছু পিছু দৌড়াত। তার কথায় কারও মনে ফাটল ধরত না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব তার কথায় ছিল না। রাসুলের খাদেম হজরত আনাস (রা.) বলেন, দশ বছর নবীজির খেদমত করেছি, কিন্তু তিনি কখনো আমার কোনো কাজের প্রতি বিরক্ত হয়ে বলেননি ‘তুমি এটা করছো কেন? এটা করলে না কেন?’

তাই জবানকে সুন্দর করতে হবে। এর কারণে মানুষ জান্নাতে যাবে, এর কারণে অনেকে জাহান্নামে যাবে। প্রতিদিন কত কথা আমরা বলি হিসাব আছে কি? কয়টা দরকারি, কয়টা অদরকারি সেদিকে কারও খেয়াল থাকে না। প্রকৃত মানুষ হতে হলে কথা হিসাব করে বলতে হবে। অপাত্রে জবান খরচ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ভাষার অলংকার আছে। সুন্দর ও শ্রুতিমধুর শব্দ যেমন ভাষার সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি সত্য, নরম ও শালীন বচন তার সুঘ্রাণ ছড়ায়। শব্দ যদি হয় ইট-গাঁথুনি, তবে বাচনভঙ্গি তার মিশ্রণ, প্রসাধনী। সবদিক লক্ষ রেখেই কথা বলতে হবে, ভাষার ঝুড়ি সাজাতে হবে। এ ভাষায় থাকবে না পরনিন্দা, পরচর্চা, তিরস্কার, তির্যক, অসত্য, অবচন ও ফায়দাহীন কোনো কথা। সুরা হুজুরাতে মানুষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘কেউ যেন কাউকে উপহাস না করে, অনর্থক দোষারোপ না করে, মন্দ বা বিকৃত নামে না ডাকে। তেমনিভাবে কেউ যেন অন্যের অসাক্ষাতে তার নিন্দা না করে, গিবত না করে।’ তিরমিজি শরিফে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, কোনো ব্যক্তি যখন তার জবানে মিথ্যা, মন্দ ও বিভ্রান্তিকর কোনো কথা বলে, তখন সে কথার কারণে সৃষ্ট দুর্গন্ধে রহমতের ফেরেশতারা তার থেকে অনেক দূরে চলে যায়।

জবানের অপব্যবহার মানুষের সম্পর্ককে নষ্ট করে। বন্ধুত্বে ফাটল ধরায়। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নভিন্ন করে। স্বামী-স্ত্রীর মধুর বন্ধনে ব্যাঘাত ঘটায়। ক্ষতবিক্ষত করে মানব হৃদয়। তাই জবান ধরে রাখুন। নিজে বাঁচুন, অপরকে বাঁচান। দেখবেন শান্তির ফল্গুধারা হৃদয়রাজ্যে নেমে আসছে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION